কলাপাড়ায় শ্রমিক সরবরাহ নিয়ে সশস্ত্র হামলা-অগ্নিসংযোগ: স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা সহ ৮০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এম. নাছির উদ্দীন (কলাপড়া, পটুয়াখালীর) কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে রাবনাবাদ নদীর তীরবর্তী মরিচবুনিয়া এলাকায় শ্রমিক সরবরাহ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটে গেল রীতিমতো যুদ্ধাবস্থা—হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হত্যাচেষ্টা ও রক্তাক্ত সংঘর্ষের এক ভয়াবহ চিত্র। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদকসহ ৯০ জনের বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।


মঙ্গলবার (১৩ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংঘবদ্ধভাবে শতাধিক মোটরসাইকেলে করে আসা একদল যুবক হঠাৎ করে মরিচবুনিয়ায় আক্রমণ চালায় ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী মো. শাহীন মৃধার শ্রমিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, আবাসিক ঘর ও শ্রমিকদের থাকার ছাউনিতে।

জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা!
বাদী শাহীন মৃধা অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা প্রথমে তাঁর ঘরে ভাংচুর চালায়, এরপর তাঁকে ঘরের ভেতরে আটকে বাইরে থেকে তালা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আশপাশে থাকা লোকজন সাহায্যে এগিয়ে আসার আগেই ঘরের মধ্যে থাকা এসি, ফ্রিজ, টিভি, সিসি ক্যামেরা, ডাম্প ট্রাক ও আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রাণে বাঁচতে তিনি ঘরের এক কোণের টিন খুলে কোনোরকমে বের হয়ে আত্মরক্ষা করেন।

এই ঘটনার সময় হামলাকারীদের রামদার কোপে আহত হন স্থানীয় দোলন মৃধা (৩৫), মিরাজ হোসেন (৩৭) ও শাহীন মৃধার গাড়িচালক রানা (৩২)। পরে তাঁরা পাশের আমতলীতে গিয়ে চিকিৎসা নেন।

কারা এই হামলার পেছনে?
বুধবার (১৪ মে) কলাপাড়া থানায় দায়ের করা মামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মহসিন তালুকদারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজল তালুকদার, ধানখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ তালুকদার, যুবদল নেতা সুমন গাজী, পৌর ছাত্রদল সদস্য সচিব জুয়েল ইকবাল, মোজাহার উদ্দিন কলেজ ছাত্রদল সভাপতি আতিকুল ইসলাম দিপু, ছাত্রদলের সাবেক নেতা জাকারিয়া লিয়নসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৭০-৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

পরিকল্পিত হত্যা প্রচেষ্টা’ ও কোটি টাকার ক্ষতি
মামলার এজাহারে বলা হয়, হামলাকারীরা বেআইনী জনতা হিসেবে সংঘবদ্ধ হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে। আগুন, ভাংচুর ও দখল চেষ্টায় অন্তত দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন বাদী শাহীন মৃধা।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, মামলা করার পর থেকেই আসামিরা তাঁকে হুমকি দিচ্ছে ও মামলা তুলে নেওয়ার চাপ দিচ্ছে। বর্তমানে তিনি বরিশালে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান।

প্রশাসনের বক্তব্য
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুয়েল ইসলাম বলেন, “মামলা রুজু হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নাকি অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব?
স্থানীয়দের অনেকে মনে করছেন, এই ঘটনাটি শুধু শ্রমিক সরবরাহ নিয়ে বিরোধ নয়—এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক আধিপত্য, এলাকার নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব বিস্তারের জটিল লড়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *