ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত অধ্যক্ষ মোস্তাফিজ ও শিক্ষানুরাগী মান্নান কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক, কলাপাড়া: পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলতপুর ছালেহিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় চাকরির জন্য ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষানুরাগী সদস্য মো. আব্দুল মান্নান কারাগারে প্রেরিত হয়েছেন।

চাকরিপ্রার্থী মো. মাহবুব এলাহীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে কলাপাড়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মাহবুব দাবি করেন, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদে চাকরির জন্য ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও চাকরি পাননি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলে জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এসআই সঞ্জীব কুমার সরকারের তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়।

মামলার প্রেক্ষিতে অভিযুক্তরা আপোষের শর্তে জামিন পেলেও পরবর্তীতে টাকা ফেরত না দিয়ে কালক্ষেপণ করেন। ফলে পুনরায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে পটুয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইউসুফ আলী তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ঘুষের কেলেঙ্কারির বিস্তারিত:

২০২৩ সালের ১৮ আগস্ট মাদ্রাসায় সাতটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এ পদগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী। প্রার্থীদের মধ্যে মো. মাহবুব এলাহী নিয়ম মেনে আবেদন করেন এবং পরে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দেন। এর মধ্যে অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানকে ৮ লাখ এবং শিক্ষানুরাগী আব্দুল মান্নানকে ২ লাখ টাকা প্রদান করা হয়।

নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেওয়ার পর দেখা যায়, শিক্ষানুরাগী আব্দুল মান্নানের ছেলে মো. ফয়সাল শরীফ ওই পদে পরীক্ষার সুযোগ পান। মাহবুবকে কোনো পদে নিয়োগ না দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ:

ঘুষ ও নিয়োগ বানিজ্যের ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) হাবিবুর রহমান নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেন। অন্যদিকে, মাদ্রাসার আরও ছয়টি পদেও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠে।

ভুক্তভোগীর করুণ চিত্র:

মাহবুব এলাহী অভিযোগ করেন, চাকরি পাওয়ার আশায় জমি বিক্রি, ব্যাংক ঋণ এবং সুদে টাকা নিয়ে ১০ লাখ টাকা দেন। এখন চাকরি তো পাননি, বরং পাওনা টাকা চাইলে নানা হুমকি পাচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমার পরিবার এখন আর্থিক সংকটে। পাওনাদারদের চাপে আত্মহত্যার কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছি।”

এ ঘটনায় এলাকার সচেতন মহল অভিযুক্তদের শাস্তি এবং ভুক্তভোগীর ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *