কলাপাড়ায় বিএনপির সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান বহিষ্কার: শৃঙ্খলাভঙ্গ ও আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ডে কেন্দ্রের কঠোর সিদ্ধান্ত

এম. নাছির উদ্দিন(কলাপাড়া, পটুয়াখালী):

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হলেন দলটির অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি সম্প্রতি বিএনপি ছেড়ে অন্য একটি রাজনৈতিক দলে যোগদান করায় দলীয় গঠনতন্ত্র ও আদর্শ লঙ্ঘনের কারণে তাঁকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত ১৩ মে ২০২৫ তারিখের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে। এতে বলা হয়, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান দলের আদর্শ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় তাকে অবিলম্বে বহিষ্কার করা হয়েছে।

রাজনৈতিক বাস্তবতা ও দলীয় সিদ্ধান্ত

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সম্প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বী একটি রাজনৈতিক দলে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছেন। এটি দলের নীতিমালার পরিপন্থী হওয়ায় তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় কমিটি। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে যোগদান করলে সদস্যপদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যায়। ফলে এই সিদ্ধান্ত ছিল সময়োপযোগী ও নিয়মতান্ত্রিক।

স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিক্রিয়া

কলাপাড়ার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা অধ্যাপক মোস্তাফিজের বহিষ্কার নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে খুব বেশি আলোড়ন সৃষ্টি হয়নি। বরং অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন, তিনি যখন অন্য দলে চলে গেছেন, তখন দল থেকে তাঁর বহিষ্কার একটি আনুষ্ঠানিক ও যৌক্তিক পদক্ষেপ মাত্র।

একজন উপজেলা বিএনপি নেতা বলেন, “দলের আদর্শ ও নীতির প্রতি দায়িত্বশীল না থাকলে তার সদস্যপদ রাখার কোনো অর্থ নেই। অধ্যাপক সাহেব অন্য দলে গিয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দল তার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে।”

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠছিল। স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা তাঁর কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের পর দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারক মহল এই কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

এদিকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে কলাপাড়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, কেন্দ্রীয় বিএনপি বর্তমানে দলীয় শৃঙ্খলার বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সেই নীতিরই প্রতিফলন।

কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, “দলীয় স্বার্থে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া সময়োপযোগী ও সঠিক হয়েছে। এতে ভবিষ্যতে কেউ নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়াতে সাহস পাবে না।

বিএনপির বার্তা স্পষ্ট

এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিএনপি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, দলীয় আদর্শ, শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্রের বাইরে কোনো কার্যকলাপ বরদাশত করা হবে না। এটি দলীয় একতা ও নীতি রক্ষায় একটি প্রয়োজনীয় এবং সঠিক পদক্ষেপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *