বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা! প্রতিবাদে উত্তাল কলাপাড়া

প্রতিবেদন: এম. নাছির উদ্দীন

কলাপাড়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক ও হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে উপজেলা বিএনপি। বুধবার (১২ মার্চ) বেলা ১১টায় এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

উপজেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে পৌর শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে মনোহরপট্টিতে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী হুমায়ুন শিকদার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান চুন্নু, পৌর বিএনপির সভাপতি গাজী মো. ফারুক, সাধারণ সম্পাদক মুসা তাওহীদ নান্নু মুন্সীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার নাসির উদ্দিন।

বিএনপির অভিযোগ ও দাবি

সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্বে থাকলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ এখনও বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবেই উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মামুন শিকদার, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিম শিকদার, নীলগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল হোসেনসহ পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বক্তারা বলেন, সরকারি গোয়েন্দা কার্যক্রমে বাধা, সরকারি বাহিনীর সদস্যকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ এনে মামলা দেওয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এটি মূলত একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার মাধ্যমে বিএনপির নেতাকর্মীদের টার্গেট করা হচ্ছে।

বক্তারা অবিলম্বে এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান এবং অন্যথায় আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন।

মামলার পটভূমি ও বিতর্ক

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকালে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পায়রা বন্দর স্টেশনের পেটি কর্মকর্তা নেসারুল ইসলাম বাদী হয়ে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম শিকদারসহ বিএনপির পাঁচ নেতাকে আসামি করে কলাপাড়া থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ঘটনার দিন ইউরো কোচ সার্ভিসের সামনে কোস্টগার্ডের গোয়েন্দা সদস্য মুস্তফা সাদিক দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি হামলা চালিয়ে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন।

তবে সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, মামলায় উল্লেখিত ঘটনাস্থল ও প্রকৃত ঘটনার মধ্যে গুরুতর অসঙ্গতি রয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ঘটনাটি ইউরো কোচ সার্ভিসের সামনে নয়, বরং নাচনপাড়া চৌরাস্তার পূর্ব দিকের রাস্তায় অবস্থিত জাহিদুলের চায়ের দোকানে ঘটেছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, মামলায় অভিযুক্ত বিএনপি নেতারা তখন ওই দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় কোস্টগার্ড সদস্য মুস্তফা সাদিক সিভিল পোশাকে ছিলেন এবং তার পরিচয় প্রকাশ করেননি। তিনি প্রকাশ্যে সিগারেট জ্বালিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে থাকেন। এতে বিরক্ত হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন প্রকাশ্যে ধূমপান না করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং পরে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।

ঘটনার সময় উপস্থিত লোকজন মামলার বাদী কোস্টগার্ড সদস্যের আচরণ ভালোভাবে নেননি বলে জানিয়েছেন। তাদের দাবি, মুস্তফা সাদিক তার পরিচয় গোপন রেখেছিলেন এবং সাধারণ নাগরিকের মতো আচরণ করছিলেন। পরে তিনি তার পরিচয় সামনে এনে মামলা দায়ের করেন, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

পুলিশের অবস্থান

কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল ইসলাম বলেন, “এ ঘটনায় পুলিশ ও কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে ইতোমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

বিএনপি নেতারা এই গ্রেপ্তারকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ বলে দাবি করেছেন এবং অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যথায় আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *