
এম. নাছির উদ্দীন
পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের লালমেয়া স্কুলের পাশে খালের উপর নির্মিত বক্স কালভার্টের নির্মাণকাজে ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর দাবি, সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এইচ এম মাহবুব হোসেনের যোগসাজশে নিম্নমানের নির্মাণকাজ পরিচালিত হচ্ছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
অনিয়ম, হুমকি ও আতঙ্ক
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় মেসার্স কোহিনূর এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১১ মিটারের এই বক্স কালভার্ট নির্মাণের দায়িত্ব পায়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের বাজেট নির্ধারিত হয় প্রায় ২৫ লাখ টাকা, যা জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা। তবে সরেজমিনে দেখা যায়, অতিরিক্ত ঢালাইয়ের ফলে কালভার্টটির একপাশ হেলে পড়েছে এবং বেশ কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এই ত্রুটি ঢাকতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তড়িঘড়ি করে মাটি দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করলেও, স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসীরা জানান, কাজের অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুললেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলে এবং ভয়ভীতি দেখায়। কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না, কারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সাথে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গভীর যোগসাজশ রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
দায়িত্বপ্রাপ্তদের বক্তব্য
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত গাজী মো. অলিউর রহমান স্বীকার করেছেন যে, ১০ ইঞ্চি ঢালাই করার কথা থাকলেও ভুলবশত সাড়ে ১৪ ইঞ্চি ঢালাই করা হয়েছে, যার কারণে কালভার্টের একপাশ হেলে পড়েছে।
অন্যদিকে, পটুয়াখালী সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এইচ এম মাহবুব হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি তথ্য না দিয়ে উল্টো সাংবাদিকদের অনুমতি নিয়ে ভিডিও ধারণ করতে বলেন এবং এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে এক সাংবাদিকের দিকে তেড়ে আসেন।
প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ
পটুয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উফফাত আরা জামান উর্মি জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং হেলে পড়া অংশটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “যদি কোনো অনিয়ম প্রমাণিত হয়, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল বন্ধ করে দেওয়া হবে। এক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সাথে আরেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সম্পর্ক থাকতেই পারে, কিন্তু অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না।”
এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে কালভার্টটি টেকসই ও মানসম্মতভাবে নির্মাণ করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।