“কলাপাড়ায় মসজিদের অর্থ আত্মসাৎ: ধরা-ছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতারা”

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের বিপুল অর্থ ও সম্পদ লোপাটের ঘটনায় স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও দীর্ঘ দুই বছরেও অনুসন্ধান শেষ করতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফলে অভিযুক্তরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী জেলা জজ আদালতে সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান, তার স্ত্রী সুরাইয়া নাসরিন, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মরহুম সুলতান মাহমুদ এবং সাব-রেজিস্ট্রারসহ আরও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন মসজিদ কার্যকরী পরিষদের সদস্য মো. আব্দুল হান্নান বেপারী। আদালত ১ মার্চ ২০২৩ অভিযোগটি আমলে নিয়ে দুদকের মহাপরিচালককে তদন্তের নির্দেশ দেন।

দুদকের সূত্র জানায়, ওয়াকফ্ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী মসজিদের স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রিতে অনুমতি প্রয়োজন হলেও আসামিরা নিয়ম লঙ্ঘন করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মসজিদের অর্থ ও সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, মসজিদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি অর্থ ও সম্পত্তি আত্মসাৎ করে আসামিরা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা থেকে বরাদ্দ পাওয়া অর্থ চেক নম্বর ও তারিখসহ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়া, ১১টি ছাপকবলা দলিলের মাধ্যমে আসামিরা তাদের স্ত্রী ও স্বজনদের নামে নামমাত্র মূল্যে মসজিদের সম্পত্তি বিক্রির কাগজপত্র দেখিয়ে সম্পদ লোপাট করেছেন।

দুদক সূত্র আরও জানায়, মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও নথিপত্র সরবরাহে গড়িমসি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তিনবার পত্র পাঠানো হলেও সাড়া মেলেনি। তবে অনুসন্ধান শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং শিগগিরই মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও ইউএনও মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “দুদকের চাহিদা অনুযায়ী নথি সরবরাহের জন্য এসিল্যান্ডকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৪-৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা হবে।”

দুদকের পটুয়াখালী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রাসেল রনি জানান, “প্রয়োজনীয় নথি পেলেই দ্রুত রিপোর্ট প্রস্তুত করে প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে এবং নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

তবে অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান এবং সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদের মৃত্যু ও রাকিবুল আহসানের দেশ ত্যাগের কারণে মামলার বিচার কার্যক্রম ও মসজিদের স্বার্থ রক্ষায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *