
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর দুর্যোগপ্রবণ কলাপাড়া উপজেলায় সরকারি স্বাস্থ্য সেবার করুণ চিত্র দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। ৩৬টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে মাত্র ২/৩ জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করায় সাধারণ মানুষের ভরসার শেষ আশ্রয়টিও ভেঙে পড়ছে। ফলে বিত্তবানরা বাধ্য হয়ে ছুটছেন জেলা সদর, বরিশাল কিংবা রাজধানী ঢাকায়। আর নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা পড়ে যাচ্ছেন পল্লী চিকিৎসক, হাতুড়ে ডাক্তার ও দালালচক্রের খপ্পরে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতালে ২১টি পদের মধ্যে কার্যত কর্মরত আছেন মাত্র ২/৩ জন চিকিৎসক। কুয়াকাটা ২০ শয্যা হাসপাতালসহ ইউনিয়ন পর্যায়ের বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পূর্ণরূপে চিকিৎসকশূন্য। মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরাও সংকটের মুখে।
স্বাস্থ্য সেবা সংকটে শুধু স্থানীয় জনগণ নয়; উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে পায়রা সমুদ্রবন্দর ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত প্রায় এক হাজার চায়না শ্রমিক। কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরাও সামান্য অসুস্থ হলে পাচ্ছেন না জরুরি চিকিৎসা সেবা।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সংকটকে পুঁজি করে এক শ্রেণির প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক ব্যবসায়ীরা সুবিধা নিচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক না পাঠানোর জন্য নেপথ্যে লবিংও চলছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। হাসপাতালের রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন প্রাপ্য সেবা থেকে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, দিনভর হাসপাতালে ডাক্তার দেখা দূরের কথা, প্রয়োজনীয় ওষুধ বা খাবার ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত নয়।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত চর নজিব গ্রামের নুরুল ইসলাম (৬৮) আক্ষেপ করে বলেন, “ডাক্তার যদি সারাদিনে একবার এসে দেখে, তাতেই ভাগ্য। হাসপাতালে থাকা আর না থাকা একই কথা।” একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন টাইফয়েড আক্রান্ত সাগর (২৫)।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জেএইচ খান লেলিন জানান, “চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি বহুবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আমরা সীমিত জনবল দিয়ে প্রতিদিন হিমশিম খাচ্ছি। রোগীর চাপ সামাল দিতে আমি নিজেই সকাল ৭টা থেকে বহির্বিভাগে রোগী দেখি। এমার্জেন্সি বিভাগে রোস্টার করে চিকিৎসক বসানো হচ্ছে। দ্রুত সমাধান প্রয়োজন।”
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলাপাড়ার মতো দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হলে এই সংকট আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। এতে শুধু স্থানীয় জনগণ নয়, পর্যটন, শিল্প, ও বন্দর অর্থনীতিও বড় ধরণের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।