নানা সংকটে বিপর্যস্ত চন্দ্রদ্বীপবাসী: যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা

বাউফল, পটুয়াখালী সংবাদদাতা

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর বুকে জেগে ওঠা একটি চরকে ২০১৩ সালে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত এই ইউনিয়নের ১৫ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। উন্নয়ন সুবিধা বঞ্চিত এই চরাঞ্চলবাসীর জীবন যেন প্রতিনিয়ত ঝুঁকির সঙ্গে সমান্তরালে চলছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা
চারপাশে নদীবেষ্টিত চন্দ্রদ্বীপে উপজেলা শহরে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় হলো খেয়া বা ট্রলার। ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিতে হয় প্রায় ৫ কিলোমিটার নৌপথ। অভ্যন্তরীণ সড়কও তেমন উন্নত নয়। ইউনিয়নের মাত্র ২ কিলোমিটার সড়ক পাকা, যা ১০ হাজার ৭৪৮ একরের আয়তনের এই অঞ্চলের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার সংকট
চন্দ্রদ্বীপে ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব প্রকট। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য প্রায় প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথ পাড়ি দিতে হয়। বিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় ঝরে পড়ার হার বেড়েই চলেছে।
স্বাস্থ্যসেবায় রয়েছে ভয়াবহ ঘাটতি। ইউনিয়নের একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিকটি জরাজীর্ণ। সেখানে নেই কোনো এমবিবিএস ডাক্তার। দুপুরের পর ক্লিনিক বন্ধ থাকায়, জরুরি প্রয়োজনে নদীপথে ১২ কিলোমিটার দূরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়।

কৃষি ও জীবিকার অনিশ্চয়তা
চরের বেশিরভাগ মানুষ কৃষক ও জেলে। ঘূর্ণিঝড় রেমালে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষি জমি প্লাবিত হচ্ছে তেতুলিয়ার পানি দিয়ে। ফসলি জমি বাঁচাতে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব প্রকট।

স্থানীয়দের আবেদন
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, জরুরি স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি স্পিডবোট ও অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন। পাশাপাশি, ইউনিয়নে একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও আরও দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের দাবি করেছেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ব্রিজ নির্মাণ ও সড়ক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাও জোরালোভাবে তুলে ধরেন শিক্ষক হারুন অর রশিদ।

প্রশাসনের বক্তব্য
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, চরাঞ্চলে উন্নয়ন কাজের জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। অনেক বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হয়েছে এবং বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে সংস্কার করা হবে।

চন্দ্রদ্বীপবাসীর জীবনমান উন্নয়নে সরকারি সহযোগিতা ও জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায়, এখানকার জনগণের দৈনন্দিন জীবন আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *