আজ ১৫ নভেম্বর: উপকূলে সিডরের ভয়াল স্মৃতির ১৭ বছর।

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
আজ ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের এই দিন রাত ৯টায় পটুয়াখালীর উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর। এ সুপার সাইক্লোন যেন মুছে দিয়েছিল পুরো জনপদের স্বাভাবিক জীবন। প্রাণ হারান ৬৭৭ জন, আহত হন সাড়ে ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে প্রায় ২ হাজার মানুষ স্থায়ীভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। এখনও প্রায় ৫০ জনের খোঁজ মেলেনি।

সিডরের তাণ্ডবে ধ্বংস হয়ে যায় প্রায় ৫৫ হাজার ঘরবাড়ি, দেড় হাজার মসজিদ-মন্দির এবং ৩৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ৫ লাখ একর ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যায়, বিলীন হয় ২৫০ হেক্টর বনভূমি। মারা যায় প্রায় ১৮ হাজার গবাদি পশু। শত শত কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৪১২টি ড্রেনেজ স্লুইস।

সিডরের ১৭ বছর পার হলেও পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় ভাঙা বেড়িবাঁধের অধিকাংশই আজও সংস্কার হয়নি। চরাঞ্চলে সাইক্লোন শেল্টারের অভাবও রয়েই গেছে। এ অঞ্চলের মানুষ আজও সিডরের দুঃসহ স্মৃতি বহন করে চলেছেন।

সিডরের ক্ষতচিহ্ন এখনো স্পষ্ট:
মহিপুরের বাসিন্দা রহিম জানান, “শৈশবে শত্রু সনের বন্যার কথা শুনেছিলাম, তবে সিডরের তাণ্ডব নিজ চোখে দেখেছি। পুরো এলাকা ধ্বংস করে দিয়েছিল। আজও সেই ভয়াবহ স্মৃতি আমাকে কাঁদায়।”

ধানখালীর আব্দুল কাদের মোল্লা বলেন, “সিডরের কথা মনে পড়লে বুকের ভেতর দাগ কাটে। তখন বেরিবাঁধ ভেঙে আমাদের এলাকা প্লাবিত হয়েছিল, সবকিছু হারিয়েছি। এত বছর পরও বেরিবাঁধ সংস্কার হয়নি।”

নীলগঞ্জের কৃষক সিদ্দিক মিয়া বলেন, “নভেম্বর এলেই সিডরের ভয় মনে পড়ে যায়। সবকিছু হারানোর সেই দিনগুলোর কথা ভুলতে পারি না। আল্লাহ যেন আর এমন প্রলয় না ঘটান।”

চলমান চ্যালেঞ্জ:
সিডরের পর ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও উপকূলীয় এলাকার দুর্বল অবকাঠামো এবং বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ এখনও শেষ হয়নি। চরাঞ্চলে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার না থাকায় ঝুঁকির মুখে রয়েছে হাজারো পরিবার।

প্রকাশিত তারিখ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *