বিশ্ব বন্য প্রাণী দিবস: জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতার আহ্বান

এম. নাছির উদ্দীন

আজ ৩ মার্চ, বিশ্ব বন্য প্রাণী দিবস। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ এই দিনটিকে বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নির্ধারণ করে। প্রতি বছর নানা প্রতিপাদ্যের ভিত্তিতে দিনটি উদযাপিত হয়, যা প্রকৃতি ও প্রাণীকূল রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে। এবারের প্রতিপাদ্য—“প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান”—উল্লেখযোগ্য, কারণ এটি মানবজাতি ও বন্য প্রাণীদের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।

বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কেন জরুরি?

বন্য প্রাণীরা আমাদের পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা শুধু প্রকৃতির শোভা বাড়ায় না, বরং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও ভূমিকা রাখে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড়, চোরাকারবারি ও নগরায়নের কারণে প্রতিনিয়ত বন্য প্রাণীদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে।

বিশ্বব্যাপী অনেক প্রাণী ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং আরও অনেক প্রজাতি এখন বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। বন উজাড়ের ফলে তাদের আবাসস্থল সংকুচিত হচ্ছে, যা তাদের টিকে থাকার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। বিশেষ করে বেআইনি শিকার ও অবৈধ বন্য প্রাণী ব্যবসার কারণে অনেক বিরল প্রাণী বিলুপ্তির পথে।

বাংলাদেশে বন্য প্রাণী সংরক্ষণের চ্যালেঞ্জ ও উদ্যোগ

বাংলাদেশেও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, গাঙ্গেয় ডলফিন, মায়া হরিণসহ বহু প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থা প্রাণী সংরক্ষণে নানান উদ্যোগ নিলেও তা যথেষ্ট নয়।

বন্য প্রাণী সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কঠোর আইন প্রয়োগ, বনভূমি সংরক্ষণ, এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করা জরুরি। ব্যক্তি পর্যায়েও আমাদের সচেতন হতে হবে—অবৈধ বন্য প্রাণী কেনাবেচা থেকে বিরত থাকা, বনাঞ্চল ধ্বংস রোধে ভূমিকা রাখা এবং প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের করণীয়

বন্য প্রাণী ও তাদের আবাসস্থল রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা

বন উজাড়, চোরাশিকার ও বন্য প্রাণী পাচার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া

পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন গ্রহণ করা

বন্য প্রাণী সংরক্ষণ সংক্রান্ত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা

বিশ্ব বন্য প্রাণী দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, বরং আমাদের সবার দায়িত্ব। প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *