
রাসেল কবির মুরাদ কলাপাড়া(পটুয়াখালী)
কলাপাড়া পৌরসভার চিংগরিয়া খালের দুই তীর ঘেঁষে বসবাস করা মানুষের জীবনে নতুন আলো নিয়ে এসেছে এই খাল। ব্যবসা, চাকরি কিংবা গৃহস্থালির কাজের ফাঁকে অনেকেই এখন এই খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এতিমখানা, চিংগরিয়া, রহমতপুর ও টিয়াখালী ইউনিয়নের কিছু অংশের মানুষ নিয়মিত সময় পেলেই মাছ ধরতে ছুটে আসছেন এই খালে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একসময় বাঁধ নির্মাণ ও খালের অংশ ভরাট করে মাছ চাষের চেষ্টা চললেও সামাজিক ও পরিবেশকর্মীদের প্রতিবাদে তা বন্ধ হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর রিট পিটিশন এবং স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে খালের বাঁধ অপসারণ করা হয়, যার ফলে খালের পানি প্রবাহ সচল হয়।
প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে চিংগরিয়া খালের ভূমিকা:
চিংগরিয়া খালটি কলাপাড়া পৌরসভার একমাত্র প্রবাহমান খাল। প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খাল আন্ধারমানিক নদী থেকে শুরু হয়ে চাকামইয়া-নিশানবাড়িয়া নদীর সঙ্গে মিশেছে। খালটি কলাপাড়া পৌরসভার প্রায় ৫,০০০ মানুষের পানি নিষ্কাশন, কৃষি কাজ এবং দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর একমাত্র উৎস। বর্ষা মৌসুমে খালের জলপ্রবাহ এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে সহায়তা করে।
তবে অসাধু চক্রের মাধ্যমে খালটির ভূমি রেকর্ড পরিবর্তন করে কিছু অংশ লিজ প্রদান করা হয়েছিল, যা জনস্বার্থবিরোধী। এতে খালের সংকীর্ণ হয়ে পড়া এবং জলাবদ্ধতার কারণে স্থানীয় কৃষকেরা ফসল চাষে ব্যাহত হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেলা সংগঠন হাইকোর্টে মামলা করে, যা খালটি উদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা:
দিনমজুর নুর আলম বলেন, “দিনের কাজ শেষে সময় পেলে খালে মাছ ধরতে আসি। এটি এখন আমাদের পরিবারের জন্য মাছের উৎস।”
আনোয়ার হাওলাদার বলেন, “মাছ বেশি ধরলে বাজারে বিক্রি করি, আর কম পেলে বাসায় নিয়ে যাই।”
স্থানীয় বাসিন্দা আল মামুন বলেন, “চাকরি করি, তবে সময় পেলেই খালে মাছ ধরতে চলে আসি। এটি আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।”
পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য:
বেলা কলাপাড়ার নেটওয়ার্ক মেম্বার মেজবাহ উদ্দিন মান্নু বলেন, “২০১৩ সালে বেলা খালটি উদ্ধারের জন্য রিট করে। হাইকোর্টের নির্দেশে বাঁধ অপসারণের পর খালের একটি অংশে পানির প্রবাহ সচল হয়েছে। এখন খালের পুরো অংশ উন্মুক্ত হলে আরও অনেক মানুষ উপকৃত হবে।”
বেলা বরিশাল বিভাগের সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন জানান, “চিংগরিয়া খালকে দীর্ঘমেয়াদি লিজ দিয়ে ব্যবহার সীমিত করা বেআইনি। খালের ভূমি রেকর্ড সংশোধন ও বন্দোবস্ত বাতিলের জন্য আমরা কাজ করছি।”
উপসংহার:
চিংগরিয়া খাল এখন কলাপাড়ার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে খালটির পুরো অংশ উন্মুক্ত এবং সংরক্ষণ করা গেলে স্থানীয় কৃষি ও জীবিকা আরও সমৃদ্ধ হবে।