
কলাপাড়া সংবাদদাতা (পটুয়াখালী):
পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরসভার রাজস্ব আয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। হাট-বাজার, খেয়াঘাট, বাসস্ট্যান্ড, পশু জবেহখানা ও গণশৌচাগারসহ পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব খাতে ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও কোনো দরপত্র জমা না পড়ায় পৌর কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে ‘খাস কালেকশন’ শুরু করেছে। অথচ এ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে ইজারা প্রভাবিত করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে, যা নিয়ে স্থানীয় মহলে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৩ ফেব্রুয়ারি ইজারা আহ্বান সংক্রান্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও নির্ধারিত সময়ে একটি মাত্র দরপত্র জমা পড়ে বাদুরতলি খেয়াঘাটের। এতে মাত্র ৫০ হাজার টাকায় ইজারা দেয়া হয় ঘাটটি। বাকি সব খাতই ইজারা ছাড়া পড়ে থাকে। এরপর ২, ১২ ও ২৭ মার্চ—তিনবার পুনঃদরপত্র আহ্বান করেও কোনো সাড়া মেলেনি। পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, সর্বমোট ৬৬টি দরপত্র বিক্রি হলেও জমা পড়ে মাত্র একটিই।
স্থানীয়রা বলছেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে দরপত্র জমা না দিয়ে খাস কালেকশনের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে একাধিক প্রভাবশালী মহল সরাসরি রাজস্ব খাত নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ইতোমধ্যে হাট-বাজার ও বাসস্ট্যান্ডে এ ধরনের চক্রের উপস্থিতি ও প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে হাট-বাজার থেকে পৌর রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৬৩ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা, খেয়াঘাট থেকে ৮ লক্ষ ৭৬ হাজার ৮০০ টাকা, বাস স্ট্যান্ড থেকে ১৫ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা, পশু জবেহখানা থেকে ৯৫ হাজার এবং গণশৌচাগার থেকে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। পরবর্তী দুই অর্থবছরে রাজস্ব হ্রাস পেতে থাকে। বিশেষ করে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হাট-বাজার খাতে রাজস্ব দাঁড়ায় ৪৮ লক্ষ ২৮ হাজার ৫৫০ টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি বছরের খাস কালেকশনের কারণে এই অঙ্ক আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ৩৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং মাস্টার রোলে থাকা আরও ৪৪ জন কর্মীর মাসিক ২২ লক্ষ টাকা বেতনভাতা পরিশোধ নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কলাপাড়া পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা কাব্য লাল চক্রবর্তী বলেন, “চারবার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। শুধুমাত্র খেয়াঘাটের একটি দরপত্র জমা পড়েছে এবং সেটি ইজারা দেয়া হয়েছে। বাকি সব খাত খাস কালেকশনে যাবে।” তবে এতে পৌরসভা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা—এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
কলাপাড়া পৌরসভার প্রশাসক ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “তিনবার ইজারা আহ্বান ব্যর্থ হওয়ার পর চতুর্থবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপরও দরপত্র না জমায় খাস আদায় করা হচ্ছে। শিগগিরই খাস আদায় কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”
স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, রাজনৈতিক প্রভাব ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর ছায়ায় পৌর রাজস্ব আদায় ব্যবস্থায় যে অস্বচ্ছতা ও জটিলতা তৈরি হয়েছে, তা শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়—প্রশাসনিক দুর্বলতার নগ্ন চিত্রও প্রকাশ করছে।