
এম. নাছির উদ্দীন, কলাপাড়া: কলাপাড়ায় অসহায় মানুষের স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে মানবতার সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিন সহৃদয় ব্যক্তি—আল-আমিন (মামুন), জসিম ও মনিরুল ইসলাম। প্রতি বছরের মতো এবারও তারা নিজেদের যাকাতের অর্থ দিয়ে দরিদ্রদের সহায়তা করেছেন। সোমবার (১৭ মার্চ ২০২৫) তারাবির নামাজের পর পৌর শহরের রহমতপুর এলাকার তাদের বাড়ির সামনে সড়কে তিনজন অসহায় ব্যক্তির হাতে তুলে দেন নতুন তিনটি অটোরিকশা।
তিন ভাই দীর্ঘদিন ধরে যাকাতের টাকা সমাজের অসহায় মানুষের কল্যাণে ব্যয় করে আসছেন। বিগত দুই বছর থেকে কর্মসংস্থানের বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তারা দরিদ্রদের স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এই ধারাবাহিকতায় এবার ইসমাইল মুন্সী (নাচনাপাড়া), মোঃ কালাম (ছোনাউঠা, আমতলী) এবং আব্দুল জলিল (নাচনাপাড়া, কলাপাড়া)—এই তিনজনকে মোট ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে তিনটি নতুন অটোরিকশা উপহার দেওয়া হয়েছে।
তিন ভাইয়ের পরিচয় ও মানবসেবার উদ্যোগ
তিন ভাইয়ের মধ্যে আল-আমিন ঢাকায় হাউজিং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, জসিম গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এবং মনিরুল ইসলাম একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মোটরসাইকেলের শোরুমের মালিক। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং সেই অর্জনের একটি অংশ সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে ব্যয় করছেন।
উপকারভোগীদের প্রতিক্রিয়া
অটোরিকশা হাতে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সুবিধাভোগীরা। তারা বলেন, “এমন উপহার আমাদের জীবন বদলে দেবে। এখন থেকে নিজের উপার্জনে সংসার চালাতে পারবো।” তারা তিন ভাইয়ের জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করেন, যেন আল্লাহ তাদের সম্পদ ও বরকত আরও বাড়িয়ে দেন।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
তিন ভাইয়ের এই মহৎ উদ্যোগ স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, সমাজের বিত্তবানদের এ ধরনের কাজে আরও এগিয়ে আসা উচিত। এক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, “যাকাতের অর্থ শুধু দান হিসেবে খরচ না করে যদি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হয়, তাহলে দরিদ্র মানুষ স্থায়ীভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে।”
ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব
ইসলামে যাকাত শুধু দান নয়, এটি সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উপায়। যাকাতের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষ কেবল ক্ষণিকের জন্য সহায়তা পান না, বরং তারা স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পান। এই তিন ভাইয়ের উদ্যোগ ইসলামের এই মূলনীতির বাস্তব উদাহরণ, যা সমাজের অন্যান্য বিত্তবানদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
তিন ভাই জানিয়েছেন, ভবিষ্যতেও তারা এ ধরনের সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। প্রতি বছরই যাকাতের টাকা দরিদ্রদের জন্য বিভিন্নভাবে ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তারা আশাবাদী, তাদের এই উদ্যোগ দেখে আরও অনেকে এগিয়ে আসবেন।
কলাপাড়ায় তিন ভাইয়ের এই মহান উদ্যোগ দারিদ্র্য বিমোচনের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে থাকবে। তাদের লক্ষ্য শুধু দান করা নয়, বরং দরিদ্রদের স্বাবলম্বী করা, যাতে তারা ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন। তাদের এই উদ্যোগ শুধু দানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি সামাজিক আন্দোলন, যা দরিদ্রদের স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে।
কলাপাড়ার এই তিন ভাই প্রমাণ করেছেন, ধর্মীয় দায়িত্ববোধ, সঠিক পরিকল্পনা ও সদিচ্ছা থাকলে যাকাতের অর্থ দিয়ে মানুষের জীবন সত্যিকার অর্থে বদলে দেওয়া সম্ভব।