
সংবাদ ২৪ বিডি নিউজ ডেস্ক:
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় তরমুজ চাষে বিপ্লব ঘটাচ্ছেন কৃষকরা। এ বছর প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে ১৫০ কোটি টাকা বাণিজ্যিক মূল্য আনতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই মাঠের তরমুজ বাজারে উঠতে শুরু করবে।
কৃষকের স্বপ্ন ও চ্যালেঞ্জ
কলাপাড়ার কৃষক মো.ইমরান হোসেন বলেন,
“গত কয়েক বছর ধরে তরমুজ চাষ করছি। এ বছর ফলন খুব ভালো হয়েছে। যদি বাজার ভালো থাকে, তাহলে আমরা ভালো লাভ করতে পারব। তবে পরিবহন ও সংরক্ষণের কিছু সমস্যা আছে, যা সরকারের সহযোগিতা পেলে সহজ হয়ে যাবে।”
অপর এক কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান,
“লবণাক্ত জমিতে তরমুজ চাষ করতে আমাদের বাড়তি যত্ন নিতে হয়। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ পেয়ে আমরা এখন সফল হচ্ছি। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় ফলন আরও ভালো হয়েছে। তবে বাজারদর নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে।”
উপকূলীয় তরমুজ চাষে প্রতিবন্ধকতা
উপকূলীয় এলাকায় তরমুজ চাষ সহজ নয়, কারণ এখানে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয় কৃষকদের।
১. লবণাক্ত মাটি ও পানি সংকট: সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় অনেক জমি লবণাক্ত হয়ে যায়, যা তরমুজ চাষে বাধা সৃষ্টি করে। সেচের জন্য মিঠা পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় ফলন কমে যেতে পারে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ: উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা থাকে, যা মুহূর্তের মধ্যে ফসল নষ্ট করে দিতে পারে।
বাজারজাতকরণের সমস্যা: স্থানীয় বাজারে তরমুজের চাহিদা কম থাকায় কৃষকদের দূরবর্তী বাজারে পাঠাতে হয়, যা পরিবহন খরচ বাড়িয়ে দেয়। অনেক সময় ফড়িয়ারা কম দামে কিনে কৃষকদের লোকসানে ফেলে।
সংরক্ষণ সুবিধার অভাব: তরমুজ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু এখানে আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেই, ফলে কৃষকদের দ্রুত বিক্রি করতে হয়, যা কখনো কখনো কম দাম পাওয়ার কারণ হয়।
প্রসেসিং শিল্পের অভাব: তরমুজ থেকে জুস বা অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন হলে কৃষকরা সারা বছর তরমুজের সুফল পেতে পারতেন।
কৃষকদের কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন?
স্থানীয় কৃষক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, তরমুজ চাষকে আরও লাভজনক করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া দরকার—
✅ লবণাক্ততা সহনশীল জাত উদ্ভাবন: কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি উপকূলীয় মাটিতে বেশি উৎপাদনশীল ও টেকসই তরমুজের জাত উদ্ভাবন করে, তাহলে উৎপাদন আরও বাড়বে।
✅ সেচ ও সংরক্ষণ সুবিধা: কৃষকদের জন্য খাল ও পুকুর খনন, গভীর নলকূপ স্থাপন এবং সেচ প্রকল্প চালু করা দরকার। পাশাপাশি সংরক্ষণ সুবিধা গড়ে তুললে কৃষকরা তরমুজ বিক্রির জন্য বেশি সময় পাবেন।
✅ বাজার সম্প্রসারণ ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা: সরকারিভাবে বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নিলে কৃষকরা ফড়িয়াদের হাত থেকে বাঁচতে পারবেন। পাশাপাশি কৃষিপণ্য পরিবহনে ভর্তুকি দিলে খরচ কমবে।
✅ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বীমা ব্যবস্থা: দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ফসল বীমা চালু করা গেলে তারা নিরাপদে চাষ করতে পারবেন।
✅ প্রসেসিং শিল্প গড়ে তোলা: তরমুজের জুস, ক্যান্ডি বা অন্যান্য পণ্য উৎপাদনের কারখানা গড়ে তুললে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবেন এবং সারা বছর এই খাত থেকে আয় করতে পারবেন।
কৃষি বিভাগের প্রতিশ্রুতি
কলাপাড়া কৃষি মো. আরাফাত হোসেন বলেন,
“আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছি। লবণাক্ত মাটিতে চাষের জন্য উপযোগী জাত নিয়ে কাজ চলছে। এছাড়া, সরকারি উদ্যোগে কৃষকদের আরও সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।”
স্থানীয় কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরমুজ এখন শুধুমাত্র মৌসুমি ফসল নয়, বরং এটি কলাপাড়ার অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তিতে পরিণত হচ্ছে। উপকূলীয় আবহাওয়া ও উন্নত প্রযুক্তির সংমিশ্রণে এ অঞ্চলের তরমুজ দেশের বাজারেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।