
এম. নাছির উদ্দীন, কলাপাড়া, পটুয়াখালী
পটুয়াখালীর পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চনার অভিযোগে উত্তাল আন্দোলন শুরু হয়েছে। রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রবেশ সড়কে শতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা ৮ দফা দাবি জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
তাদের দাবি পূরণ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন ক্ষতিগ্রস্তরা। কর্মসূচিতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্লান্ট ম্যানেজারের গ্রেপ্তারসহ ভূমি অধিগ্রহণে বৈষম্য ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
৮ দফা দাবিতে কী বলছেন ক্ষতিগ্রস্তরা?
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, তাদের জমি অধিগ্রহণের সময় ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি এবং প্রতিশ্রুত সুবিধাগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। তারা বলেন, “আমাদের জীবিকা ধ্বংস হয়েছে। সরকার পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন করেনি।”
তাদের ৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে:
১. ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা।
২. পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং পরিবারের সদস্যদের চাকরি প্রদান।
৩. পরিবেশ দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
৪. স্থানীয় জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ প্রকল্প।
৫. স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান।
৬. সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্দিষ্ট তহবিল গঠন।
৭. অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে তদন্ত কমিটি গঠন।
৮. ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা অভিযোগ করেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণেই তারা আজ রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। “আমাদের জমি গেছে, জীবন গেছে; কিন্তু প্রতিশ্রুতির কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি,” বলেন একজন বয়োজ্যেষ্ঠ আন্দোলনকারী।
কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকা
ক্ষতিগ্রস্তদের দাবির বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। তবে আন্দোলনের কারণে কেন্দ্রের কার্যক্রমে কিছুটা বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন, তাদের দাবিগুলো দ্রুত মেনে না নেওয়া হলে তারা আরও বড় পরিসরে আন্দোলনের ডাক দেবেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এই আন্দোলন শুধু পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়, দেশের বৃহত্তর উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর প্রতি মানুষের আস্থার জায়গা পুনর্গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।