
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আলোচিত রাজনৈতিক মুখ শাহিন মৃধা—নামেই বিএনপি নেতা, কিন্তু গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের ছায়াতলে গড়ে তুলেছেন এক বিশাল অর্থ সাম্রাজ্য। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতা পরিচয়ে সক্রিয় হলেও, তার বিরুদ্ধে রয়েছে প্রতারণা ও আত্মসাতের একাধিক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা, মাল ক্রোকের আদেশ এবং পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি। তারপরও তিনি রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনুসন্ধান না থাকায় প্রশ্ন উঠেছে, আয়কর বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভূমিকা নিয়েও।
তদন্তে জানা গেছে, ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামের নাছিম খানের কাছ থেকে লাভসহ ১০ লাখ টাকা ধার নিয়ে তা আত্মসাৎ করেন শাহিন। এ ঘটনায় নাছিম খান আদালতে (মামলা নং: সিআর-৩৫৭/২৩) মামলা দায়ের করেন।
শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মো. আনিস উদ্দীনের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া ৭০ টন ধারণক্ষমতার একটি ক্রেন গায়েব করে দেন শাহিন। টাকা পরিশোধ তো করেনইনি, বরং দাবি করলে মাস্তান দিয়ে ভয় দেখান বলে অভিযোগ। এ নিয়ে আদালতে (সিআর-১০৪২/২২) আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়।
শাহিন মৃধার সবচেয়ে বড় প্রতারণা ঘটে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে। সরকারি দলের সাবেক প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শাহিন ‘মিফতা ট্রেডার্স’ নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা অগ্রিম নিয়ে কয়লা আনলোডিং, জেটি নির্মাণ ও পরিবহন কাজে চুক্তিবদ্ধ হন। এরপর চুক্তি ভঙ্গ করে মালামাল পাচার ও আত্মসাতের অভিযোগে আদালতে (সিআর-১৯৩/২৩) আরেকটি মামলা হয়। অভিযোগ রয়েছে, প্রায় ৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকার পাইপ পাইল গায়েব করেন তিনি।
১৩ মে ২০২৫, তার প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিসংযোগ হয় জেটিঘাট দখল কেন্দ্র করে। শাহিন পাল্টা মামলা করেন ২১ বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে, আরও ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এতে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, এই মামলার মাধ্যমে ফেরারি আসামি শাহিন দলের নেতাদের ফাঁসাতে চায়।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হাফিজুর রহমান চুন্নু বলেন, “শাহিন মৃধা বিএনপির কেউ নন, তিনি আওয়ামী দোসর। ফেরারি হয়েও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না।”
এদিকে, কলাপাড়া থানার ওসি মো. জুয়েল ইসলাম বলেন, “শাহিনের সাথে পুলিশের সখ্যতার অভিযোগ সত্য নয়, গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।”
তবে শাহিন মৃধার বক্তব্য জানতে বারবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগের ছায়ায় বিএনপির নাম ব্যবহার করে প্রতারণার এমন নজিরবিহীন অভিযানের হোতা শাহিন মৃধাকে ঘিরে জনমনে রি হয়েছে নানাবিধ প্রশ্ন। মামলার একজন ফেরারি আসামী কিভাবে এতদূর যেতে পারলেন, আর কাদের ছায়ায় এই সাম্রাজ্য গড়ে তুললেন, এখন তা খোলাসা হওয়ার অপেক্ষা।