
এম. নাছির উদ্দীন(কলাপাড়া,পটুয়াখালী)
পটুয়াখালী জেলার পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় রাতের অন্ধকারে একটি ফিলিং স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে মুখোশধারী দুই দুর্বৃত্ত। ঘটনার প্রকৃতি ও সময় দেখে স্থানীয়দের ধারণা, এটি পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাশকতা হতে পারে।
ঘটনাটি ঘটে বুধবার (১৪ মে) দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে। কুয়াকাটা মহাসড়ক লাগোয়া ওই ফিলিং স্টেশনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, মুখে কাপড় বাঁধা দুই ব্যক্তি দেয়াল টপকে স্টেশনে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
স্থানীয়দের তৎপরতায় বড় দুর্ঘটনা এড়ানো যায়
ঘটনার সময় স্টেশনে কর্মরত ছিলেন সাদ্দাম হোসেন নামের এক কর্মী, যিনি রাতের ডিউটি শেষে ঘুমাচ্ছিলেন। হঠাৎ রাস্তায় চলাচলরত কয়েকজন অটোচালক আগুন দেখে চিৎকার করলে তিনি জেগে ওঠেন। স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়, যার ফলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
পুড়ে গেছে স্টেশনের পেছনে রাখা পুরোনো দুটি পাম্প মেশিন ও সাতটি খালি ড্রাম। তবে মূল অংশের মজুতকৃত তেল ও গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ আগুন থেকে রক্ষা পায়।
মালিক ও পুলিশের বক্তব্য:
ফিলিং স্টেশনের মালিক কাদের ফরাজী বলেন, “মোবাইলে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, পরিত্যক্ত দুটি মেশিন ও কয়েকটি খালি ড্রামে আগুন দেওয়া হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে মুখোশধারী দুজনের আগুন লাগানোর দৃশ্য পরিষ্কারভাবে দেখা গেছে।”
মহিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, “ঘটনার পর রাতেই পুলিশ গিয়ে পরিদর্শন করেছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নাশকতা না দুর্ঘটনা—প্রশ্ন ঘোরে জনমনে
এই অগ্নিকাণ্ড নিছক কোনো দুষ্টামি, নাকি এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক বা আর্থিক স্বার্থের জটিলতা—তা নিয়ে স্থানীয় মহলে নানা আলোচনা চলছে। কুয়াকাটার মতো গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল এলাকায় এমন অঘটন পর্যটন নিরাপত্তা ও জনআতঙ্কের দিক থেকেও উদ্বেগজনক।
সচেতন মহল মনে করছে, দ্রুত তদন্ত করে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন না হলে এ ধরনের হামলা আবারও ঘটতে পারে। তারা দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার পর ফিলিং স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে। তদন্তে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে মুখোশধারী দুই ব্যক্তির চলাফেরা ও আগুন লাগানোর ধরণ দেখে পেশাদারিত্বের ইঙ্গিত মিলেছে, যা তদন্তকে আরও গভীরে নিতে সাহায্য করছে।
এই ঘটনায় যেমন ক্ষয়ক্ষতি সীমিত হয়েছে, তেমনি এটি স্থানীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একটি সতর্কবার্তা। যদি পরিকল্পিতভাবে এমন অগ্নিসংযোগ করা হয়, তবে তা নিঃসন্দেহে ফৌজদারি অপরাধ এবং এর নেপথ্যে থাকা চক্রকে চিহ্নিত করাই এখন সময়ের দাবি। তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করছে এই ঘটনার প্রকৃত উদ্দেশ্য উন্মোচন।